সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

মুজিবনগরে পিএসকেএস শাখা অফিস ঘেরাও ॥ ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানী ও মারপিটের অভিযোগ



মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালীতে অবস্থিত পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতির (পিএসকেএস) শাখা ম্যানেজারের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানী ও মারপিটের অভিযোগে উঠেছে। প্রতিবাদে আজ সোমবার সকালে অফিস ঘেরাও করে বিক্ষুব্ধ জনতা। গ্রাহককে অফিসে ডেকে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অফিসে আটকে রেখে মারপিট করায় গ্রামবাসী ফুঁসে উঠেছে। উক্ত শাখা অফিস থেকে ইউনিয়ন সমন্বয়কারী (বর্তমানে ম্যানেজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রফিকুল আলমকে অবিলম্বে অপসারণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে অফিসের সকল স্টাফদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে। গ্রাহক আসাদুল ইসলামকে (৪৫) লাঞ্ছিত ও মারপিট করা হয়েছে। আহত আসাদুল ইসলাম বর্তমানে মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, মোনাখালী গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আসাদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নূপুর বেগম পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে স্থানীয় পিএসকেএস অফিস থেকে ঋণ গ্রহন করেন। অভাবের কারণে দু’সপ্তাহ কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন। এতে ম্যানেজার কৌশলে আসাদুল ও নূপুরকে অফিসে ডেকে নিয়ে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে তাকে স্ত্রীর সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও ঘরের মধ্যে আটকিয়ে মারপিট করে। তার চিৎকারে পার্শ্ববর্তী লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামের বিক্ষুব্ধ জনতা লাঠিসোটা নিয়ে অফিস ঘেরাও করে ও অভিযুক্ত রফিকুল আলমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। পরে আ‘লীগের নেতা আকবর আলীর নেতৃত্বে স্থানীয় জনগন ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আহত আসাদুল ইসলাম জানায়, তিনি বিভিন্ন গ্রামে চিড়া ও গুড় ফেরি করে বিক্রি করেন। ১০ মাস আগে তিনি পলাশীপাড়া সমাজ কল্যান সমিতির মোনাখালী শাখা থেকে তার নামে ৫০ হাজার টাকা একটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ এবং তার স্ত্রী নুপুরা খাতুনের নামে ২০ হাজার টাকার আরেকটি ঋণ গ্রহণ করেন। তার ঋণ পরিশোধে প্রতি সপ্তাহে এক হাজার তিন শত টাকা এবং স্ত্রী ঋণ পরিশোধে প্রতিমাসে সাতশ টাকা করে দিয়ে আসছেন। গত রবিবার তার কিস্তির টাকা দেওয়ার দিন ছিল। তিনি জানান, গত দুই মাস ধরে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর কারণে দশ পনের দিন বুকে ব্যাথা বেড়ে যাওয়ায় তিনি ব্যবসায় যেতে পারেননি। যে কারণে কোনো আয় না হওয়ায় এই সপ্তাহের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। ঘটনার দিন সকালে তিনি ওই এনজিও অফিসে গিয়ে তার অসুস্থের কথা জানিয়ে প্রতি সপ্তাহে ৫শ টাকা করে দিয়ে ঋণ শোধ করার আবেদন জানান। এর এক পযার্য়ে শাখা ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন ও তার সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। আসাদুল অভিযোগ করে জানান, পরে আনোয়ার হোসেন নামের এক কর্মী তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিচতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে তিন তলায় নিয়ে যান। সেখানে ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম তার সাথে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে কিল ঘুষি ও চড় থাপ্পড় মেরে আহত করেন। পরে আসাদুলের পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে ওই অফিস থেকে তাকে উদ্ধার করে মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। মুজিবনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাবার বেডের পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়ে আশরাফুন নেসা বলেন, তিন মাস ধরে তার পিতা হাের্টর অসুখে ভুগছেন। সে কারণে আগের মত আর ব্যবস্যা করতে পারেন। এখন তাদের সংসারও ঠিকমত চলেনা। ম্যানেজার যেভাবে মেরেছে তাতে বুকে কোনো আঘাত হলে সংসার চালানো লোকটি অক্ষম হয়ে যাবে। আমরা এর বিচার চাই। মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহিদুর রহমান জানান, আহত আসাদুলকে ভর্তি করে পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে। তবে সে আশংকামুক্ত বলে জানিয়েছেন তিনি। মোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান বলেন, আসাদুল খুবই গরিব মানুষ। সে আমার জমিতে বাস করে। এর আগে আমি ম্যানেজারকে বলেছিলাম তাকে চাপ দিয়েছেন সময় নিয়ে আস্তে আস্তে টাকাটা নিয়েন। তারপরও আজ শুনেছি তাকে মারধর করা হয়েছে। এটা খুব অন্যায় করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত শাখা ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার কাছে দুই কিস্তির আর তার স্ত্রীর এক কিস্তিসহ তিন হাজার তিনশ টাকা পাওয়া যাবে। সে ৫শ টাকা দিয়ে বলে আর দিতে পারবা না। এনিয়ে কথাকাটা হয়েছে। তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। কাহিনী সাজাতে সে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ব্যাপারে পলাশীপাড়া সমাজ কল্যান সমিতির নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, কিন্তি আদায় নিয়ে কোনো সমস্যার কথা তিনি জানেনা। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেক কর্মীকে কৌশল অবলম্বন করে পাওনা টাকা আদায় করতে বলা হয়েছে। কোনো ধরণের মানসিক বা শারিরিক চাপ দিয়ে টাকা আদায় সম্পুর্ণ নিষেধ করা আছে। তবে বিষয়টি আমি দেখছি বলে তিনি জানান। মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল হোসেন বলেন, এ ঘটনায় আসাদুলের স্ত্রী নুপুরা খাতুন একটি অভিযোগ করেছেন। আমারা সেটিকে সাধারণ ডায়েরী হিসেবে রেকর্ড করে আদালতে আবেদন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন