নদীর তীরে হাজার হাজার উৎসুক দর্শকের উপচে পড়া ভীড় ভৈরব নদীর পাড় থেকে রেজাউল করিম রেজাঃ আকাশ সাংস্কৃতি আর তথ্য প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ খেলাধুলা। এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না এসব
প্রতিযোগীতার। তরুণদের কাছে পরিচিতি করার জন্য হারিয়ে যেতে বসা নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা হয়ে গেল মুজিবনগর ভৈরব নদীতে। সকলেই মেতে উঠেছিল এ উৎসবে। আর অংশ নেয়া নতুন প্রজন্মের দাবি খেলাটি টিকিয়ে রাখার। এক সময় মেহেরপুরের বিভিন্ন নদীতে নিয়মিতই আয়োজন করা হত নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা। জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতিযোগীরা অংশ নিতো এখানকার খেলোয়াড়রা। পুরষ্কার ছিনিয়ে এনেছেন সেখান থেকে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ও নদীগুলো শুকিয়ে যাবার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি। ভৈরব নদী খননের ফলে সূযোগ আসে এ খেলার আয়োজনের। তরুণ প্রজন্মের কাছে খেলাটি পরিচিত করার লক্ষ্যে প্রায় ১০ বছর পর মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার গোরিনগর গ্রামের ভৈরব নদীতে অনুষ্ঠিত হল নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা। জেলার ১২ টি দল প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। খেলাটি দেখতে হাজার হাজার দর্শক ভিড় জমিয়েছিল নদীর দু’পাড়ে। অনেকেই কাজ ফেলে ছুটে আসেন খেলাটি উপভোগ করতে। আর তরুণরা খেলাটির সাথে পরিচিত হতে পেরে খুশি। প্রতি বছর এ ধরনের
খেলার আয়োজনের দাবি তাদের। প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়া প্রবীন খেলোয়াড় বুদু বিশ্বাস জানান, আগে নিয়মিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছেন তারা। কাশার ঘড়া, দেয়াল ঘড়ি, রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন পুরষ্কারও জিতেছেন। কালে ভদ্রেও এখন আর নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতার দেখা মেলে না। অনেক বছর পর এ প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে খুশি তারা। তরুন প্রতিযোগী সাজ্জাদ হোসেন জানান, বয়স্কদের সাথে খেলাটি রপ্ত করেছেন তারা। উভয়ে মিলে
অংশ নিয়েছেন প্রতিযোগীতায়। খেলাটি টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের চেষ্টা করবেন তারা। মেহেরপুর শহর থেকে খেলা দেখতে আসা আব্দুর রশিদ জানান, ১০ থেকে ১২ বছর আগে তারা খেলাটি দেখেছেন। অনেক বছর পর শুনে নৌকা বাইচ দেখতে ছুটে এসেছেন নদীপাড়ে। খেলা দেখে মুগ্ধ তিনি। তরুণ প্রজন্ম নির্জন জানান, এর আগে টিভিতে খেলা দেখেছেন। আজ বাস্তবে দেখে উচ্ছাসিত তারা। প্রতি বছর এ ধরেনের খেলার আয়োজনের দাবি তাদের। আয়োজক কমিটির সদস্য আব্দুল হান্নান জানান, তরুন প্রজন্মের কাছে খেলাটি পরিচিত করার জন্য এ ধরনের আয়োজন। দর্শকদের চাওয়া পাওয়া থেকেই প্রতি বছর বড় পরিসরে এ প্রতিযোগীতা আয়োজনের আশ্বাস দিলেন তিনি। প্রথম রাউন্ডে নক আউট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় এলাকার মোট ১২টি দল অংশগ্রহণ করছে। পরে লিগ খেলায় ফিরাতুলের দল ০৯, জামারুলের দল ০৯, সোহাগের দল ০৬, কালামের দল ০৬ এবং ফিরোজ ও কিয়ামুদ্দিনের দল শূন্য পয়েন্ট পেয়েছে। আজ শনিবার বাকী ৫টি লিগ এবং সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিনিত হবে বলে আয়োজকরা জানান। প্রতিযোগিতার ১ম, ২য় ও ৩য় পুরস্কার হিসেবে থাকছে একটি বড় খাসি, একটি ছোট খাসি ও ২টি রাজহাঁস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন